শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই জোরপূর্বক গুমের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ডিসঅ্যাপিয়ার্ড, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহযোগী প্রতিষ্ঠান-এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে এ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জোরপূর্বক গুম একটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকারকর্মীদের তথ্যানুযায়ী ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৯ আগস্টের মধ্যে ২১২ জনকে গুম করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের বাকস্বাধীনতা, চিন্তা, বিবেক-বিবেচনা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, দল বা সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, বিচার বা ক্ষতিপূরণ পায়নি।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুমের ঘটনার জন্য দায়ী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপহরণকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পোশাক ও গাড়ি ব্যবহার করেছে। তারা নিজেদের র্যাব (র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন) বা ডিবি (পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে) সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টে গেলেও এর বিচার পায়নি। বিচারক, এ্যাটর্নি জেনারেল ও এ্যাটর্নিদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত মামলায় অবহেলা প্রদর্শন এবং বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে সশস্ত্র সংস্থাগুলো দায়মুক্তি লাভ করেছে। এটা রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে গুমের ঘটনা অব্যাহত রাখার পথ তৈরি করে দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিবৃতিতে বলেছে, গুমের ধরন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নির্লিপ্ততা, বিচার বিভাগের অসহযোগিতা ও ভুক্তভোগীদের পরিচয় দেখে বুঝা যায় মুখবন্ধের অস্ত্র এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দুর্বল করতেই এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের স্ত্রীরা ‘বিধবা’ বা ‘তালাকপ্রাপ্তা’ কোনোটাই না হলেও ওভাবেই জীবন-যাপন করছেন। এ ধরনের ঘটনা রোধে কাজ করতে যাওয়া মানবাধিকারকর্মীরা হয়রানি ও হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা তাদের হয়রানি করছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের গুমের ঘটনা স্পষ্টত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আইনের লঙ্ঘন। সংস্থাটি জোরপূর্বক গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ধরনের ঘটনা অনবরত ঘটতে থাকলে বিশ্ব সম্প্রদায় চুপ করে থাকবে না। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের ভবিষ্যতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।